[ad_1]
সুপ্রভাত ডেস্ক
বাজারে প্রায় সব পণ্যের অগ্নিমূল্যে অস্থির ক্রেতারা। আদা, রসুন, মসলার মতো নিত্যপণ্যের পাশাপাশি লাগামহীন ছুটছে অন্য ভোগ্যপণ্যের দামও। ব্যবসায়ীরা প্রধানত দায়ী করছেন ডলার সংকট ও এলসি খোলার সমস্যাকে। এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ফেলেছে বাড়তি চাপে। চলতি বছর দেশের পণ্য আমদানিও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। যার একটি বড় প্রভাব পণ্যের দামে পড়ছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পণ্য আমদানি কমার কারণে স্বাভাবিকভাবে যতটুকু সংকট তৈরি হয়েছে, এর চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে পণ্য মূল্যস্ফীতি। আমদানি সংকটের অজুহাতে অনৈতিকভাবে পণ্যের দাম বাড়ানোর প্রবণতা রয়েছে ব্যবসায়ীদের। এছাড়া আছে সিন্ডিকেটের প্রভাব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, গত অর্থবছর (২০২২-২৩) দেশে ৬ হাজার ৯৫০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ মূল্যের পণ্য আমদানি হয়েছে, যা এর আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১৬ শতাংশ কম। ওই অর্থবছর (২০২১-২২) আমদানির পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ২৫০ কোটি ডলার। এটা অর্থের হিসাবে। পরিমাণের দিক থেকে পরিসংখ্যান দেখলে কাস্টম হাউজ ও শুল্ক স্টেশনগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পণ্য আমদানি হয়েছে ১৩ কোটি ৩১ লাখ টন। যেখানে ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ১৩ কোটি ৮২ লাখ টন। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে আমদানি পণ্যের পরিমাণ কমেছে ৫১ লাখ টন বা ৩ দশমিক ৭১ শতাংশ। খবর জাগোনিউজ।
দেশে সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। ২০২১-২২ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হয় ৯ দশমিক ২১ মেট্রিক টন পণ্য। এসব পণ্যের আমদানি মূল্য ৪২০ লাখ কোটি টাকা।
২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি কমেছে ৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ। তবে আমদানি কম হলে ব্যয়ও কমার কথা। কিন্তু উল্টো খরচ বা আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১০ দশমিক ০৫ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬১ হাজার ৬৩২ দশমিক ৬৬ কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৫৯ হাজার ১৫৯ দশমিক ৮৩ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ দিয়ে শুল্কায়নের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি হয় ৮ দশমিক ৮৫ কোটি মেট্রিক টন পণ্য। এসব পণ্যের আমদানি মূল্য ৪৬২ লাখ কোটি টাকা। জানা যায়, গত বছর বেশি কমেছে শিল্পের কাঁচামাল, বিলাসবহুল পণ্য ও ভোগ্যপণ্য আমদানি। এ তিন খাতের ব্যবসায়ীরাই যার প্রধান কারণ হিসেবে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও সংকটের কথা বলেছেন। এছাড়া গত অর্থবছরের বেশ কিছু সময় বিলাসীপণ্য ও অপ্রয়োজনীয় পণ্যের করভার বাড়ানো, আমদানি নিয়ন্ত্রণ এবং ৩০ লাখ ডলারের বেশি ঋণপত্র খোলার বিষয়ে তদারকির কারণে আমদানি কমেছে।
বাজারের তথ্য বলছে, আমদানি সংকটে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে খাদ্যপণ্যের। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্য বলছে, গত এক বছরের ব্যবধানে আমদানিনির্ভর চিনির দাম বেড়েছে ৫১ শতাংশ। এসময় ৮৫ থেকে ৯০ টাকার চিনি হয়েছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। এছাড়া বাজারে গুঁড়া দুধের দাম ১৭ শতাংশ, ধনে, জিরা, লবঙ্গের মতো গরম মসলার দাম ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এছাড়া আদা-রসুনের দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। আদার দাম প্রায় সাড়ে ৩শ শতাংশ এবং রসুনের দাম ৮৭ শতাংশ বেশি। একশো টাকার মধ্যে বিক্রি হওয়া এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এখন ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজিতে ঠেকেছে।
আবার কাঁচামাল আমদানি কম হওয়ায় বাজারে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব ছিল রড ও ইস্পাত পণ্যের। তথ্য বলছে, গত এক বছরে প্রতি টন রডের দাম প্রায় ২৫ হাজার পর্যন্ত বেড়ে লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। একই অবস্থা লেখার কাগজের ক্ষেত্রেও। গত এক বছরে লেখার কাগজের দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। এছাড়া গত এক বছরে প্রাণী খাদ্যশিল্পের কাঁচামাল, খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত শিল্পের কাঁচামাল, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস, ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল, প্লাস্টিক পণ্য ও ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা আমদানি সংকটের কথা জানিয়েছেন। জানতে চাইলে দেশের অন্যতম শীর্ষ আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেন, এবছর খাদ্যশস্য আমদানি অনেক কমেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান কাঁচামালের অভাবে পণ্য উৎপাদন কমিয়েছে। আবার বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বমুখী দামের একটা প্রভাব ছিল এবছর। তিনি বলেন, এসব কারণে পণ্য সরবরাহে ব্যাঘাত হওয়ায় দাম বেড়েছে, যা সাধারণ মানুষের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করেছে।
আবুল বশর চৌধুরী বলেন, চলতি বছরের শুরুর দিক থেকে পণ্য আমদানি করতে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে ডলার। কয়েক দশক ধরে পণ্য আমদানি করলেও ডলার নিয়ে এমন সংকটের মুখে পড়িনি কখনো। এলসি করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। সমস্যা হয়েছে পণ্য দেশে আনার পরও। ডলার না থাকায় দিনের পর দিন পণ্য সাগরে ভেসেছে এবার। এতে খরচ বেড়েছে আমদানিকারকদের। যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। তবে এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক অর্থনীতিবিদ খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের দেশের স্বাভাবিক সময়ের মতো আমদানি করার সামর্থ্য নেই এটা সত্য। সার্বিক রিজার্ভ কমেছে এসময়, অনেক পাওনা রয়েছে যেগুলো অপরিশোধিত। সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে পণ্য আমদানি সাশ্রয় হ্রাস একটি বড় কৌশল। তিনি বলেন, তবে আমদানি কমে যাওয়া খাদ্য মূল্যস্ফীতির কারণ। এর মধ্যে খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি আমদানি কমায় ভোক্তারা পণ্যের দামের চাপে পড়ছে। আবার যতটুকু মূল্যস্ফীতির চাপ তৈরি হয়েছে, এর চেয়ে বেশি বাজারে সিন্ডিকেট করে অনৈতিক সুবিধা নেওয়া হচ্ছে। যতটুকু প্রকৃত চাপ রয়েছে, তার চেয়ে বাড়তি চাপ দেখানো হচ্ছে।
এবছর রাশিয়া-ইউেক্রেন যুদ্ধের কারণেও পণ্য আমদানিতে বড় প্রভাব ছিল। যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বাড়ছিল, যা এক সময় রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। ওই সময় বেশকিছু পণ্য আমদানি প্রায় শিথিল হয়ে পড়ে।
এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর দেশ দুটি থেকে বাংলাদেশে সার, গম, তেলবীজসহ বেশকিছু পণ্য আমদানি প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে যায়।
[ad_2]